রিপোর্ট প্রিন্ট

শেয়ার করুনঃ



সোনারগাঁয়ে মাদক ব্যবসার পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে যুবককে হত্যা

 


সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নে শাহজাহান (৩১) নামের এক যুবককে মাদক ব্যবসার পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে  কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। 

গত সোমবার রাতে রাজধানীর মালিবাগে প্রাইম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হওয়ার সংবাদ নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা।

নিহত শাহজাহান উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামের আল ইসলামের ছেলে। 

নিহতের মা রিনা বেগম জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কোরবানপুর গ্রামের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী রাসেল  পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে মোবাইল ফোনে শাহজাহানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পাওনা টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্ধ চলছিল। পরে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে তাদের বাড়ির সামনে কবরস্থানের সামনে রাসেলের নেতৃত্বে তার সহযোগী কমল হক, বিজয় ও ইমরান,আনোয়ার ও নুর হোসেনসহ ৮-১০ জনের একটি দল তাকে ছুরিকাঘাত করে হাতের ও পায়ের রগ কেটে আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর পর শাহজাহানকে রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার রাতে শাহজাহান মারা যায়। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, সোনারগাঁ থানায় একাধিক মামলার আসামী ও তালিকা ভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী রাসেল মাহমুদ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কোরবানপুর এলাকার মৃত সাফায়তউল্লাহর ছেলে। এ ঘটনার পূর্বেও ২০১৯ সালের ২৭ শে জুন তার নেতৃত্বে তার শ্যালক চিহ্নিত সন্ত্রাসী র‍্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হওয়া হৃদয় হোসেন ওরফে গিট্টু হৃদয় ও তার সহযোগীরা পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ভূইয়ার বড় ছেলে রাসেল সিরাজকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় এন.এফ.সি রেস্টুরেন্টে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছোট শিশু কন্যার সামনে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় র‍্যাবের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে গিট্টু হৃদয় নিহত হলেও অদৃশ্য ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়  রাসেল মাহমুদ থাকে ধরা-ছোয়ার বাহিরে। ৫ ই আগষ্ট সরকার পতনের পর বিএনপির ট্যাগ লাগিয়ে হয়ে ওঠে আরো বেপরোয়া। তারই ধারাবাহিকতায় মাদক ব্যবস্যার পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে শাহজাহান নামের যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।  

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, রাসেল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী।  স্থানীয় এক প্রভাবশালীর মেয়ের জামাই হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারেনা৷ কেউ কিছু বললেই তাদের বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করে আবার কেউকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এলাকার যুব সমাজকে মাদকাসক্ত ও ধ্বংসের অন্যতম মূল হোতা এই রাসেল। প্রশাসনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তাদের নাকের ডগায় এমন অপকর্ম করে যাচ্ছে। আমরা এই রাসেল থেকে মুক্তি চাই। তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাই। 

এদিকে নিহত শাহজাহান একজন মাদকাসক্ত যুবক। সে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামী উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের হরমুজ মিয়ার ছেলে পায়েলের ঘনিষ্ঠ সহচোর। দীর্ঘ দিন যাবত সে রাসেলের থেকে মাদক ক্রয় করে নিজে সেবন ও মাদক বিক্রি করতো। এই মাদকের টাকার লেনদেনের কথা-কাটাকাটি এক পর্যায়ে রাসেল ও তার সহযোগীরা এলাকার কবরস্থান সংলগ্ন রাস্তায় হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।  পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২ দিন নিবির পর্যবেক্ষণে থাকার পর গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।  

এঘটনায় অভিযুক্ত রাসেল ও ইমরানের সাথে একাধিকবার মুঠোফনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও রিসিভ করেনি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি। 

এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল বারী জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় ইতোপূর্বে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ঘটনাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করা হবে।  ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

0/আপনার মতামত জানান