সোনারগাঁ(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নের ছোট কোরবানপুর (মাদলাপাড়া) এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ কে কেন্দ্র করে শাহজাহান (৩২) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামী ইমরান (৪২)কে গ্রেফতার করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ বারী। এর আগে বুধবার রাত সারে ১০ টায় উপজেলার কাঁচপুর এলাকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী মোঃ ইমরান হোসেন ওরফে ইমরান সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউপির ছোট কুরবানপুর এলাকার মৃত আশেক আলী ওরফে হাসুর ছেলে।
নিহত মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহানও একই এলাকার পার্শ্ববর্তী দুধঘাটা গ্রামের আল ইসলামের ছেলে।
উল্লেখ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছোট কোরবানপুর (মাদলাপাড়া) এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ইমরান ও বিজয়সহ ৬ থেকে ৭ জনের সন্ত্রাসী শাহজাহানকে গত বৃহস্পতিবার( ২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতারীভাবে কুপিয়ে রক্তাক্তজখম করে। এ সময় তার ডাকচিৎকারে আশেপাশে লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা রাজধানীর মালিবাগে প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহজাহানের মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর শাহজাহান হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোঃ ইমরান হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।তিনি আরোও জানান বাকি আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, সোনারগাঁ থানায় একাধিক মামলার আসামী ও তালিকা ভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী রাসেল মাহমুদ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কোরবানপুর এলাকার মৃত সাফায়তউল্লাহর ছেলে। এ ঘটনার পূর্বেও ২০১৯ সালের ২৭ শে জুন তার নেতৃত্বে তার শ্যালক চিহ্নিত সন্ত্রাসী র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হওয়া হৃদয় হোসেন ওরফে গিট্টু হৃদয় ও তার সহযোগীরা পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ভূইয়ার বড় ছেলে রাসেল সিরাজকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় এন.এফ.সি রেস্টুরেন্টে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছোট শিশু কন্যার সামনে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় র্যাবের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে গিট্টু হৃদয় নিহত হলেও অদৃশ্য ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রাসেল মাহমুদ থাকে ধরা-ছোয়ার বাহিরে। ৫ ই আগষ্ট সরকার পতনের পর বিএনপির ট্যাগ লাগিয়ে হয়ে ওঠে আরো বেপরোয়া। তারই ধারাবাহিকতায় মাদক ব্যবস্যার পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে শাহজাহান নামের যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, রাসেল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী। স্থানীয় এক প্রভাবশালীর মেয়ের জামাই হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারেনা৷ কেউ কিছু বললেই তাদের বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করে আবার কেউকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এলাকার যুব সমাজকে মাদকাসক্ত ও ধ্বংসের অন্যতম মূল হোতা এই রাসেল। প্রশাসনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তাদের নাকের ডগায় এমন অপকর্ম করে যাচ্ছে। আমরা এই রাসেল থেকে মুক্তি চাই। তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাই।
এদিকে নিহত শাহজাহান একজন মাদকাসক্ত যুবক। সে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামী উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের হরমুজ মিয়ার ছেলে পায়েলের ঘনিষ্ঠ সহচোর। দীর্ঘ দিন যাবত সে রাসেলের থেকে মাদক ক্রয় করে নিজে সেবন ও মাদক বিক্রি করতো। এই মাদকের টাকার লেনদেনের কথা-কাটাকাটি এক পর্যায়ে রাসেল ও তার সহযোগীরা এলাকার কবরস্থান সংলগ্ন রাস্তায় হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২ দিন নিবির পর্যবেক্ষণে থাকার পর গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন